কুমড়োর ভেষজগুণ সম্পর্কে জানব ঃ

মিষ্টিকুমড়ো  মিষ্টিকুমড়ো একটি জনপ্রিয় সবজি। এটিকে গরিবের পুষ্টি বলা হয়। কচি ও পাকা ফল সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরিপক্ব ফলের বিটা ক্যারোটিন রাতকানা রোগ নিরাময় হয়। সবজি বিজ্ঞানীদের মতে মিষ্টিকুমড়ার ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে প্রোটিন ১.৪ ভাগ, ক্যালসিয়াম ১০০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৫০ মাইক্রো গ্রাম এবং ভিটামিন সি ২ মিলিগ্রাম বিদ্যমান। মিষ্টিকুমড়ার কচি ডগা, পাতা এবং ফুল সবজি হিসেবে খুবই মুখরোচক। সবজি হিসেবে মিষ্টিকুমড়ার মিষ্টতা আমরা সবাই জানি। মিষ্টিকুমড়া অনন্য ভর্তা, ভাজি আর ঝোলে। খুব সহজেই চাষযোগ্য এই সবজির ডাটা-পাতা শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। প্রচুর পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টিকুমড়া সবজির মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। আজ জেনে নেব সহজ লভ্য সুস্বাদু সবজি মিষ্টিকুমড়া গুণের মিষ্টতা সম্পর্কে। * প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টিকুমড়ায় আছে প্রায় সাত হাজার মিলিগ্রামের মতো ভিটামিন এ। পর্যাপ্ত পরিমাণে মিষ্টি খেলে চোখ ভালো রাখা সম্ভব। এই কুমড়ায় থাকা জিটা জ্যানথিন বয়সজনিত রেটিনার ক্ষয় পর্যন্ত রোধে সাহায্য করে। * মিষ্টিকুমড়া খুবই কম ক্যালরিযুক্ত সবজি, এতে কোলেস্টেরল বা সম্পৃক্ত চর্বি নেই বললেই চলে। * মিষ্টিকুমড়ায় প্রচুর পরিমানে ফাইবার বা আঁশ আছে। সহজে হজম যোগ্য সবজিটি বেশি খেলেও ওজন বাড়ার আশঙ্কা নেই। * মিষ্টিকুমড়ায় বিটা ক্যারোটিন আছে, যা দেহের ভেতর গিয়ে ভিটামিন এ হিসেবে পরিণত হয়। * মিষ্টিকুমড়ায় পাওয়া যায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, কপার, পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। দেহের সুস্থতার জন্য এর সবকটিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। * মিষ্টিকুমড়া ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। তাই আপনার সবজির তালিকায় মিষ্টিকুমড়া রাখতে পারেন নির্দ্বিধায়। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় প্রথম দিকেই রয়েছে মিষ্টি কুমড়া। ভিটামিন এ চোখের সমস্যা দূর করে, রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। মজার ব্যাপার হলো মিষ্টি কুমড়া একই সাথে সবজি এবং ফল হিসেবে খাওয়া যায়। মিষ্টি কুমড়া এক ধরনের বর্ষজীবি লতানো উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম Sweet gourd হলেও সারাবিশ্বে Pumpkin নামেই পরিচিত। মিষ্টি কুমড়ার বৈজ্ঞানিক নাম Cucurbita maxima। মিষ্টি কুমড়া নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে - খাদ্যশক্তি- ৪১ কিলোক্যালরি আমিষ- ১.৪ গ্রাম শর্করা- ৪.৫ গ্রাম চর্বি- ০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ- ০.৭ গ্রাম ভিটামিন বি- ০.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি- ২৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম- ৪৮ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল- .০৬ মিলিগ্রাম লৌহ- ০.৭ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন- ৭২০০ মাইক্রোগ্রাম   ভিটামিন এ সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়া যে শুধু চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করে তাই নয়, পাশাপাশি অন্যান্য রোগ প্রতিরোধেও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। যেমন - - মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে জিংক, যা হাড়ের অস্টিওপোরোসিস রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা ঠিক রাখে এবং শরীরে বয়সের ছাপ সহজে পড়তে দেয় না। এছাড়া চুলপড়া কমাতে ও চর্মরোগ প্রতিরোধে মিষ্টি কুমড়া সহায়তা করে। - মিষ্টি কুমড়ায় উপস্থিত বিটাক্যারোটিন খুবই শক্তিশালী এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ফ্রি র্যাডিকাল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে। দূষণ, মানসিক চাপ এবং শাকসবজি ও ফলমূলে থাকা ক্ষতিকর কেমিক্যালের কারণে ফ্রি র‍্যাডিকাল ড্যামেজ হতে শুরু করে। ফ্রি র‍্যাডিকাল ড্যামেজের ফলে শরীরের সুস্থ ও ভালো কোষগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। এই কোষ নষ্ট হওয়া প্রতিরোধ করা যায় নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেলে। - মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে এল ট্রিপটোফ্যান নামের এক ধরনের বিশেষ উপাদান যা বিষণ্নতা প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। আপনার যদি প্রায়ই মন খারাপ থাকে অথবা বিষণ্নতায় ভোগেন, তাহলে খাদ্যতালিকায় রাখুন মিষ্টি কুমড়া। - উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের রোগীদের নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খাওয়া উচিত। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। - মিষ্টি কুমড়ার ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ঠান্ডার সমস্যা, অ্যালার্জির সমস্যা, সর্দি-কাশি ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে মিষ্টি কুমড়া।   মিষ্টিকুমড়া (Pumpkin) গ্রীষ্ম-বর্ষার জনপ্রিয় সবজি। এটি শর্করা, ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ এবং খনিজের উত্তম উৎস। বাংলাদেশে চাষাধীন জমি প্রায় ১৪,০০০ হেক্টর। এটি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয় প্রজাতি বলে মনে করা হয়। সরাসরি বীজবপন বা দুই সপ্তাহ বয়সী চারা রোপণের মাধ্যমে চাষ করা যায়। প্রায় ৯০ দিনের মধ্যে ফলন শুরু হয়। বিক্রমপুরী ও বারোমাসী স্থানীয় জাত। হেক্টরপ্রতি গড়পড়তা ফলন ২০-২৫ মে টন। লতা, পাতা, ফুল ও ফল বহুল ব্যবহূত সবজি। ফল তরকারি ও মিষ্টান্ন রান্নায় ব্যবহূত হয়। বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর মিষ্টিকুমড়া একটি বর্ষাকালীন সবজি। তবে আজকাল দেখা মেলে সারাবছরই। আমিষ, শর্করা, চর্বি, খনিজ, লবণ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, কোলেস্টেরল, লৌহ ইত্যাদি পুষ্টিসমৃদ্ধি এই মিষ্টিকুমড়া আমাদের দৈনন্দিন খাবারে যোগ করতে পারে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। আসুন জেনে নিই মিষ্টিকুমড়ার ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার সম্পর্কে। সবজি হিসেবে : মিষ্টিকুমড়া সবজি হিসেবে বেশি খাওয়া হয়ে থাকে। ভাজি বা যেকোনো ধরনের মাছের সাথে সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এই মিষ্টিকুমড়া। আবার অনেক এলাকায় এটিকে মাংসের সাথে ভুনা করে খাওয়ারও রেওয়াজ চালু রয়েছে। স্যুপ হিসেবে : মিষ্টিকুমড়া স্যুপ হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। যেহেতু সবজিটি স্বাদে কিছুটা মিষ্টি তাই এটি স্যুপ হিসেবে রান্না করলে মজাদার একটি খাবারে পরিণত হয়। সাধারণ স্যুপের মতই এই মিষ্টিকুমড়ার স্যুপ রান্না করা যায়। স্বাদের ভিন্নতা আনতে এতে গোলমরিচ, ক্রিম এবং চিনাবাদামের মাখন ব্যবহার করা যেতে পারে। প্যানকেক হিসেবে : আশ্চর্য হলেও সত্য যে মিষ্টিকুমড়ার তৈরি কেকও খাওয়া যেতে পারে। যেভাবে গাজর দিয়ে কেক তৈরি করে থাকেন, একই ভাবে হতে পারে মিষ্টিকুমড়ার কেকও। স্মুদি হিসেবে : যদিও এটা ফল নয়, তবুও মিষ্টিকুমড়া স্মুথি হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে। এর জন্য ৮ কাপ দুধ, একটি কলা আর ১/৪ কাপ মিষ্টিকুমড়া ভালোভাবে ব্লেন্ড না হওয়া পর্ন্ত মেশাতে হবে। এতে ১-২ টেবিল চামচ মাখন দিলে স্বাদে ভিন্নতা আসবে। কফিতে মিষ্টিকুমড়া : মিষ্টিকুমড়ার তৈরি কফিও বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। এর জন্য একটি ব্লেন্ডারে হট কফি আর বাদামের দুধ মিশিয়ে নিন। এতে এক টে্বিল চামচ মিষ্টিকুমড়ার মিশ্রণ ও দারুচিনি গুঁড়া দিন। এরপরে মিশ্রণটেকে ব্লেন্ড করতে থাকুন। এভাবেই তৈরি করে ফেলতে পারেন মিষ্টিকুমড়ার কফি। বীজ ভাজা : পুষ্টিকর এই মিষ্টিকুমড়ার বীজ ভাজি করেও খাওয়া যায়। এর জন্য মিষ্টিকুমড়া থেকে বীজগুলো আলাদা করে ধুয়ে তা বিভিন্ন মসলা দিয়ে মেখে তেলে ভেজে নিতে হয়। এক্ষেত্রে স্বাদের ভিন্নতার কারণে কেউ কেউ এর সাথে চিনি মিশিয়ে খেতেও বেশ পছন্দ করেন।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ