চিরতার ভেষজগুণ সমৃদ্ধ বিভিন্ন রোগে জীবনদায়ী ঔষধ ঃ

চিরতার জানা অজানা তথ্য চিরতা ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বীরুৎ জাতীয় গাছ । চিরতার ইংরেজি নাম Clearing nut tree । আয়ুর্বেদিক নাম চিরায়তা, ইউনানী নাম কিরাত তিক্তা, চিরায়তা । চিরতা ফল পাকলে কালচে বর্ণ ধারণ করে এবং বীজ গোলাকার ও হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে । চিরতা তিতা স্বাদযুক্ত। চিরতার যে অংশ ব্যবহার করা যায়: চিরতার সমগ্র উদ্ভিদ ব্যবহার করা যায়। চিরতার ব্যবহারবিধি ও উপকারিতা: ইউনানী চিকিৎসা অনুযায়ী চিরতা হৃৎপিণ্ড ও যকৃতের কার্যক্ষমতা বৃ্দ্ধি করে, চোখের জ্যোতি বাড়ায়, জ্বরের জন্য বিশেষ উপকারী । ইউরোপ আমেরিকাতে এটি বলকারক ও শক্তিকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ডায়রিয়া ও হাঁপানি রোগে ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মোতাবেক চিরতা স্নিগ্ধকারক, হজমকারক, চক্ষুরোগনাশক। ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগে চিরতার ব্যবহার: ৫ থেকে ১০ গ্রাম চিরতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে সকালের দিকে অর্ধেকটা এবং বিকালের দিকে অর্ধকেটা খেতে দিতে হবে। শোথে রোগে চিরতার ব্যবহার: শোথে এমনকি এলার্জির কারণে শরীর চুলকায়ে ফুলে উঠলে চিরতা এক্ষেত্রে কাজ করে । রাতে ৪/৫ গ্রাম চিরতা ২৫০ মি.লি গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ওটাকে ছেঁকে ২/৩ বার ঐ পানিটা খেলে উপশম হয়। রক্তপিত্তে রোগে চিরতার ব্যবহার: এই সমস্যায় ৪ বা ৫ গ্রাম চিরতা দেড় বা দু কাপ ঠাণ্ডা পানিতে ঘণ্টা খানিক ভিজিয়ে রেখে ৩/৪ বারে খেতে হবে। প্রবল হাঁপানিতে: একজিমার সাথে যাদের হাঁপানি অথবা অর্শ্বে রক্ত পড়া বন্ধ হওয়ায় হাঁপানি প্রবলাকার ধারণ করেছে, এমনটি হলে আধা গ্রাম চিরতাচূর্ণ ৩ ঘণ্টা অন্তর ২/৩ বার মধু সহ চেটে খেতে হবে । ফলে হাঁপানির প্রকোপটা কমে যাবে। নব্য প্রসূতার স্তন্য শোধনে: অনেক সময় দেখা যায় নবপ্রসূতার শরীরে জ্বর জ্বর ভাব, জড়তা, এসিডিটি প্রভৃতি দেখা দেয় । এই মায়ের বুকের দুধ খেয়ে সন্তানের পেটফাঁপা, বমি, সাদা বা সবুজ ধরণের পায়খানা প্রভৃতি দেখা দেয় । এক্ষেত্রে ৪ বা ৫ গ্রাম চিরতা ২ কাপ ঠাণ্ডা পানিতে ৩/৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে সেটা ছেঁকে খেলে মায়ের স্তন্য দোষের সমস্যা কেটে যাবে। যে কোন চুলকানিতে: ২০ গ্রাম চিরতাকে অল্প পানি দিয়ে ছেঁচে লোহার কড়াইতে সরষের তেল গরম করে তাতে ভাজতে হবে যেন পুড়ে না যায় । এরপর ওটাকে নামিয়ে ছেঁকে অল্প অল্প করে নিয়ে চুলকানিতে ঘষে লাগালে ২/৩ দিনের মধ্যে উপশম হবে। পচা ঘায়ে: যে সমস্ত পচা ঘা সহজে সারছে না সে সমস্ত ঘা এর ক্ষেত্রে ১০ গ্রাম চিরতা রাতে ১ কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে পরের দিন সে ঘা ধুলে ২/৩ দিনে ভাল ফল পাওয়া যাবে। গর্ভাবস্থায় বমিতে: গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বমির উদ্রেক হয় । সেক্ষেত্রে চিরতা চূর্ণ ১ গ্রাম করে চিনির পান দিয়ে খেলে ঐ বমি হওয়াটা বন্ধ হয়ে যায়। ক্রিমির উপদ্রবে চিরতার ব্যবহার: পেটের উপরের অংশে মোচড় দিয়ে ব্যথা যা সাধারণত ২ থেক ৮ বছরের ছেলেমেয়েদের বেশী হয়; এক্ষেত্রে ২৫০ মিলি গ্রাম থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত চিরতা অল্প মধু অথবা একটু চিনি মিশিয়ে খেলতে দিতে হবে । এতে ক্রিমির উপদ্রবজনিত পেটে ব্যথা সেরে যাবে। ডায়াবেটিস রোগে চিরতার ব্যবহার: ডায়াবেটিস নানা ধরণের হতে পারে । তাবে যে ধরণেরই হোক না কেন ৫০০ মিলিগ্রাম চিরতা চূর্ণ ও ২ গ্রাম ছোট গোক্ষুর চূর্ণ (Tribulas terrestris) এক সাথে মিশ্যে সকালে ও বিকালে পানিসহ দু´বার খেতে হবে । তাহলে এই রোগ প্রশমিত হবে। চুল পড়াতে: হয়ত কোন কারণে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না অথচ চুল পড়ে যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে ২/৩ গ্রাম চিরতা ১ কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই পানিটাকে ছেঁকে মাথা ধুলে চুল ওঠা কমে যাবে । তবে ১ দিন পরপর ৩/৪ দিন ধুতে হবে। এছাড়া ২৫ গ্রাম চিরতা ফুল ২০০ গ্রাম নারকেল তেলে ভেজে ঐ তেল মাথায় ব্যবহারে খুসকী সহ মাথায় ফুসকুড়ি ওঠা বন্ধ হয়। প্রচণ্ড বমিতে: পিত্তজ্বরে বা ঘন ঘন বমি হচ্ছে যেটা তিতা এবং কিছুটা জ্বর আছে এবং পেটে কিছুই থাকছেনা সে ক্ষেত্রে ২ কাপ গরম পানিতে আন্দাজ ৫ গ্রাম চিরতা একটু থেঁতো করে ভিজিয়ে রাখতে হবে । ২/৩ ঘণ্টা বাদে ওটা ছেঁকে অল্প করে খেতে হবে তাহলে এ সমস্যা দূর হবে। চিরতার কার্যকারিতা: বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বার স্বীকৃত যে সকল জৈবিক কার্যকারিতায় চিরতা উপকারী ভূমিকা রাখে সেগুলো হল- ক্রমিনাশকতায়, লেশম্যানিয়াসিস প্রতিরোধে, শোথ নিরাময়ে, প্রদাহনাশকতায়, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে, জ্বর নিরাময়ে, যক্ষ্মা প্রতিরোধে, স্নায়ুর কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণে, কোমলতা আনয়নে, যকৃত প্রতিরক্ষায়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, রেচনে, পেটের ব্যথায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, টনিক হিসেবে, হৃদকার্য নিয়ন্ত্রণে, রক্ত পরিষ্কারে ।  হাইপোগ্লাইসেমিক কার্যকারিতার জন্য চিরতার কার্যকর উপাদানটি হল সোয়ের চিরিন । এসব ছাড়াও গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ উভয় প্রকার ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে চিরতা জীবাণুনাশক কার্যকারিতা প্রদর্শন করে । হারবাল এন্টিসেপ্টিক ও এন্টিগাংগাল ওয়েন্টমেন্ট প্রস্তুতিতেও চিরতা ব্যবহৃত হয় । আধুনিককালে চিরতা গণোরিয়া, সিফিলিস, শ্বেত প্রদর, ডায়াবেটিস ও আলসারে বহুল ব্যবহৃত হয় ।  

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ